স্বীয় পদে পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যানরা। বুধবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান। ‘স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের অপসারিত জনপ্রতিনিধিবৃন্দ’-এর ব্যানারে এর আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ষষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও গাজীপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইজাদুর চৌধুরী মিলন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্বতন্ত্রভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষভাবে বিভিন্ন ধাপে মেয়াদ উত্তীর্ণ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে দলীয় কোনো মনোগ্রাম, মনোনয়ন ও দলীয় প্রতীক ছিল না। নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আমরা বিজয় অর্জন করে শপথ গ্রহণ করে অনেকেই উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম শুরু করি। তবে গত বছরের ১৮ ও ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগের উপজেলা-১ শাখার পত্রে উপজেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৪ এর ধারা ১৩ (ঘ) প্রয়োগ করে সারা দেশের ৪৯৫টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানান ও ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে। এসময় উপজেলা পরিষদে জনপ্রতিনিধি না থাকায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর নাগরিক সেবা প্রতিনিয়ত বিঘ্ন হচ্ছে।’ এছাড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত সকল জনপ্রতিনিধিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
স্থানীয় সরকার উপজেলা পরিষদ আইন ব্যতিরেকে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে এসব জনপ্রতিনিধিকে অব্যহতি প্রদান স্থানীয় সরকারের মূল আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা বহাল তবিয়তে আছেন। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও মহানগর বিএনপি নেতা শপথ গ্রহণ করে মেয়র হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে। আমরা হতবাক হয়েছি। এই বিষয়গুলো বৈষম্য নয় কী?’
তিনি বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এটাই কি আমাদের অপরাধ? না, এটা আমাদের অর্জন। আমরা স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা, তার দোসর নেতা এবং কথিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নামধারী আওয়ামী ক্যাডারদের দেখানো ভয়ভীতি তথা রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে স্বতন্ত্রভাবে ভোটের মাঠে ভোটযুদ্ধে লড়াই করে জনগনের ভোটে জয়লাভ করেছি।’ এসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেও উপজেলা নির্বাচন হলে সেখানেও তারা নির্বাচিত হবেন বলেও জানান তিনি। একইসঙ্গে তিনি উপজেলা জনপ্রতিনিধিদের স্বপদে বহালের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার অপসারিত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলাম। মানুষের সেবা করার জন্য আমরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারে বসেছিলাম। কিন্তু এক মিনিটের মধ্যেই আমাদের অপসারণ করা হয়। জনগণ আমাকে প্রতিদিন ফোন দেয়। কিন্তু তারা তো জানে না যে, আমাদের অপসারণ করা হয়েছে। জনগণের স্বার্থেই আমাদের স্বীয় পদে বহাল করুন।’
দিনাজপুরের চিরির বন্দর উপজেলা পরিষদের অপসারিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লায়লা বানু বলেন, ‘মানুষের ভোটে আমরা ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আমাদেরকে অপসারণ করা হয়েছে। এর কারণে মানুষ নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়ছেন। জনগণ এখনও আমাদের সেবা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ষষ্ঠ উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মস্তাক আহমদ পলাশ, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান ফোরামের সদস্য সচিব মো. হানিফ আহমেদ প্রমুখ।