“সচিবালয় ঘেরাও, ফ্যাসিস্ত দোসরদের বিরুদ্ধে আবার গর্জে উঠেছে ছাত্রজনতা-“

Share

ফ্যাসিস্ত দোসররা সচিবালয়ে বসে সরকারকে অচল করে রেখেছে দাবী করে আজ আবার গর্জে উঠেছে ছাত্রজনতা। ফ্যাসিস্তদের আস্তানা সচিবালয়ে থাকবে না, জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো, ভারতের দালালরা হুশিয়ার সাবধান, হাসিনার দালালরা হুশিয়ার সাবদান ধ্বনিতে আজ দুপুরে সচিবালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ও ওসমানী মিলনায়তনের গেটে বিহ্মোভে ফেটে পরে ছাত্রজনতা।

জুলাই-অভ্যুত্থানের চেতনায় উদ্বুদ্ধ এসব প্রতিবাদকারী সাধারণ ছাত্র-জনতার প্রতিনিধি হিসেবে সজীব মিয়া (সাবেক ছাত্র সংগঠক ও গ্রীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী), তারেক রেজা (যুগ্ম সদস‍্য-সচিব, এনসিপি), রফিকুল ইসলাম আইনী (কেন্দ্রীয় সংগঠক, এনসিপি) এর নেতৃত্বে একটি দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব বরাবর এক স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনে ‘ফ্যাসিস্ট দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা’, জুলাই-আগস্ট যোদ্ধাদের ওপর ধারাবাহিক হামলা এবং প্রশাসনের পরিকল্পিত নিষ্ক্রিয়তা, বসয়ের ভারে অচল কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে রাখা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে তাৎক্ষণিক শুদ্ধি অভিযানের দাবি জানানো হয়।

স্মারকলিপির মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:

১. হাসনাত আবদুল্লাহর উপর হামলার ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত গঠন করতে হবে এবং ফ্যাসিস্ত সহযোগী ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগনেতা কর্মীদের আটক করতে হবে। জুলাই যোদ্ধা ও সাধারন নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

২. রাতের ভোটের নির্বাচনী প্রহসনে জড়িত সকল আমলাকে (সচিব থেকে ইউএনও পর্যন্ত) অপসরন ও বরখাস্ত এবং দূর্নীতি ও অপরাধ জড়িতদের আটক করে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।

৩. প্রশাসনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট দোসরদের চিহ্নিত করে সচিবালয়, সরকারি দপ্তর ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো থেকে নির্মূল করতে হবে।

৪. স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেতনাভিত্তিক ওবং জুলাই- আগস্টের স্পিরিট ধারনকারী একটি প্রশাসনিক কাঠামো তৈরী ও সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে গ্রহণ করতে হবে।

৫.ফ্যাসিস্ট ও দুঃশাসনের প্রতীক যেসব ফ‍্যাসিস্টের দোসর অপরাধী জামিনে মুক্তি পাচ্ছে—তাদের জামিন পুনর্বিবেচনা করে দ্রুত বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

৭২ ঘন্টার আলটিমেটাম সহ স্মারকলিপি প্রদান শেষে প্রতিনিধি দল প্রেস ব্রিফিং এ গণমাধ্যমকে বলেন, “এই রাষ্ট্রের দ্বিতীয় স্বাধীনতা হাজারো ছাত্র-জনতার রক্ত দিয়ে অর্জিত। ছাত্রজনতা সেই অর্জনকে যেকোন মূল্যে রক্ষা করবে। এখনো ফ্যাসিস্ত দোসররা সচিব সহ বিভিন্ন পদে বসে আছে, এই প্রশাসনকে অচল করে রাখার এই ষড়যন্ত্র আর সহ্য করা হবে না। রাতের ভোট ও ডামি ভোটের কুশীলব আমলালারা পরিকল্পিত ভাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরী করে দেশকে স্থবির করার সাথে জড়িত। সেসব আমলাকে অনতিবিলম্বে সচিবালয়সহ সকল সরকারি দপ্তর থেকে অপসারণ করে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। দূর্নীতিবাজ, শারিরীক ভাবে অচল, ফ্যাসিস্ত দোসর কর্মকর্তাদের অবিলম্বে অপসারণ করে প্রশাসনকে সচল করতে হবে ”

তাছাড়া প্রতিনিধি দলের আরেক সদস‍্য রফিকুল ইসলাম আইনী, কেন্দ্রীয় সংগঠক (এনসিপি) জানান যে “হাসনাত আব্দুল্লাহ এর উপর হামলার বিষয়ে
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মন্তব্য করেন তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বসে এভাবে নির্লিপ্তত ও গা ছাড়া মন্তব্য একজন ব্যক্তি কিভাবে করতে পারেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। কাল আমি রফিকুল ইসলাম আইনী যদি কাল হামলায় নিহত হই আপনি মন্ত্রীপরিষদ সচিব ঠিক ই সচিবালয়ে এসি রুমে বসে অফিস করবেন। জুলাই আন্দোলনে আপনি একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি অথচ হ্মমতার পদ দখল করে আছেন। আপনারা হাসিনার দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে রেখে সরকারকে অচল করে রেখেছেন। আপনাদের এই নির্লিপ্ততার জন‍্য এত হাজার ছাত্র জনতা প্রাণ দেয়নি ও আহত হয়নি। আপনাদেরকে এর জবাব দিতে হবে”

সর্বশেষ প্রতিনিধি দলের অন‍্যতম নেতা তারেক রেজা (যুগ্ম সদস‍্য-সচিব, এনসিপি) সংবাদ মাধ্যমকে জানান যে, “ আমাদের দাবি সমূহ সম্পূর্ণ যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত । ইন্টেরিম যদি দাবি সমূহ বাস্তবায়নে কালক্ষেপণ করে বা এর কোনরূপ ব‍্যত‍্যয় ঘটে তবে মুক্তিকামী সাধারণ ছাত্র-জনতা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে সমুন্নত রাখতে ও উত্থাপিত দাবিসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে। আমরা খুনী হাসিনাকে টেনে নামিয়েছি প্রশাসনে থাকা
ফ‍্যাসিস্টের দোসর সুবিধাভোগী আমলা কাউকে রেহাই দেবে না।”

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সাথে প্রতিনিধি দলের একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দাবিসমূহ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ না এলে তারা ছাত্র-জনতা ঐক্য গড়ে তুলে দেশজুড়ে বৃহৎ আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই স্মারকলিপি কেবল একটি অভিযোগপত্র নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের ভেতরে গড়ে ওঠা আধা-ফ্যাসিস্টিক গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে এক কৌশলগত প্রতিবাদ। প্রশাসনের নিরবতা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে এমন অবস্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে বলেই মনে করছেন তাঁরা।

স্মারকলিপিতে দেয়া আলটিমেটাম এবং জনগণের ক্ষোভ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে কাঁপন ধরিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন সত্যিই শুদ্ধির পথে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়, নাকি এই নীরব বিস্ফোরণের আগুন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

Related Articles

ফের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল ইরান

একাধিক বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যখন ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন...

এবার পাটগ্রাম সীমান্ত থেকে ২ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল বিএসএফ

এবার লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ধবলসতী গাটিয়ারভিটা সীমান্তে ছবি তোলার সময় দুই বাংলাদেশিকে...

এনসিপি’র প্রেস বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ জানালো ইশরাকের আইনজীবী

বিজ্ঞ প্রথম যুগ্ম জেলা ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল এবং নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে নির্বাচনী মামলা...

যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ সম্পদ নিয়ে চুক্তি সই

কয়েক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা চলার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি চুক্তিতে...