ভুল ইনজেকশন পুশ করায় শিশুর মৃত্যু, পালালেন ডাক্তার-নার্স

Share

হাত ভাঙার চিকিৎসা নিতে এসে লাশ হয়ে মর্গে গেল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র শিশু সাজিদ (১০)। অনভিজ্ঞ নার্স দিয়ে নিয়মবহির্ভূত ইনজেকশন পুশ করায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সোলাইমান হোসেন মেহেদি জানিয়েছেন। শনিবার সকালে উপজেলা সদরের দেওয়ান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু মৃত্যুর এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর হাসপাতালের নার্স ও কর্তৃপক্ষ পলাতক। এদিকে পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ওই শিশুর লাশ থানায় নিয়ে গেছে।

সাজিদ টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের সর্শিনারা গ্রামের জুয়েলের ছেলে বলে জানা গেছে। সে একই উপজেলার বিরকুসিয়া গ্রামে নানার বাড়ি থেকে লেখাপড়া করত বলে পারিবারিক সূত্র জানায়।

জানা গেছে, সাজিদ গত ৩ মার্চ নানার বাড়িতে বাইসাইকেল চালানোর সময় পড়ে গিয়ে বাম হাতের হাড় ভেঙে ফেলে। পরদিন তাকে মির্জাপুর দেওয়ান হাসপতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল শুক্রবার রাতে ডাক্তার সোলাইমান হোসেন মেহেদি সাজিদের হাতে অস্ত্রোপচার করেন। সকালে সাজিদ মায়ের হাতে খাবার খায়। পরে হাসপাতালের কর্তব্যরত পিংকি ও শিফা নামের দুই নার্স সাজিদের শরীরে পরপর ইনজেকশন পুশ করে। নার্স শিফা ইনজেকশন পুশ করার পরই সাজিদ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাজিদকে অ্যাম্বুলেন্স যোগে কুমুদিনী হাসপাতালে নেয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাজিদকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সাজিদের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এদিকে সাজিদের মৃত্যুর পর দেওয়ান হাসপাতালের ডাক্তার নার্স ও কর্মচারীরা পালিয়ে গেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দেওয়ান হাসপাতাল একটি কসাইখানা। প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালে চিকিৎসার নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অনভিজ্ঞ নার্স দিয়ে সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।

সাজিদের মা সুমা বেগম জানায়, অপারেশনের পর আমার ছেলে ভালো ছিল। খাবারও খেয়েছে। সবার সঙ্গে কথা বলেছে। শনিবার সকালে সাজিদকে পিংকি নামের একজন নার্স ইনজেকশন দেয়। কিছুক্ষণ পর আরেকজন নার্স এসে আরেকটি ইনজেকশন দেয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাজিদ আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে মারা যায়।

দেওয়ান হাসপাতালের চিকিৎসক সোলাইমান হোসেন মেহেদি জানান, সাজিদের অপারেশন পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র সঠিক ছিল। কর্তব্যরত নার্স হাইপাওয়ারের ভুল ইনজেকশন পুশ করেছেন। ওই ইনজেকশন ৫ থেকে ১০ মিনিট ধরে পুশ করার নিয়ম। অদক্ষতার কারণে দ্রুত ইনজেকশন পুশ করায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (হার্ডের ভাল্ব বন্ধ) হয়ে শিশুটির মৃত্যু হয়।

মির্জাপুর থানার ওসি শেখ রিজাউল হক দিপুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সাজিদের মরদেহ থানায় নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে। এ ছাড়া তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Related Articles

ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে নগর ভবনে চলছে অবস্থান কর্মসূচি

ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে অবস্থান...

“সচিবালয় ঘেরাও, ফ্যাসিস্ত দোসরদের বিরুদ্ধে আবার গর্জে উঠেছে ছাত্রজনতা-“

ফ্যাসিস্ত দোসররা সচিবালয়ে বসে সরকারকে অচল করে রেখেছে দাবী করে আজ আবার...

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র পারভেজ হত্যায় গ্রেপ্তার ৩

বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যার ঘটনায় ৩ জনকে...

রামপুরায় কফি হাউজে তরুণীকে মারধর, ম্যানেজারসহ দু’জন আটক

রাজধানীর রামপুরা থানার তালতলায় ‘আপন কফি হাউজে’ এক তরুণীকে মারধরের একটি ভিডিও...