কাতারের মরুভূমিতে যখন আর্জেন্টিনার হাতে উঠেছিল বিশ্বকাপ, তখন অনেকেই ভেবেছিল—এটাই বুঝি লিওনেল মেসির শেষ নৃত্য, ফুটবলের মঞ্চে তাঁর চূড়ান্ত বিদায়। কিন্তু সময় থেমে থাকে না আর মেসি নামের শিল্পীর কাব্যও যেন এখনও অসম্পূর্ণ। কাতারের পর থেকেই প্রশ্ন একটাই—২০২৬ সালে কি আবার দেখা যাবে তাঁকে বিশ্বকাপের মঞ্চে? এমন প্রশ্নের জবাবে দ্বিধা করেননি মেসি। সাক্ষাৎকারে তাঁর কথার ভাঁজে ভাঁজে ছিল এক আশাবাদের দীপ্তি—‘দেখা যেতে পারে।’ ইন্টার মায়ামির হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে খেলা এই আর্জেন্টাইন জাদুকর যেন এখন নিজের শেষ অধ্যায়ের পটভূমি নিজেই রচনা করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ‘সিম্পলিমেন্টে ফুটবল’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবারও সেই সম্ভাবনার কথাই জানালেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। তবে তাঁর শর্ত একটাই—নিজের প্রতি থাকতে হবে সৎ।
মেসির ভাষায়, যদি শরীর-মন বলে ‘হ্যাঁ’, আর আত্মার ভেতরটা যেন না ঠকানো হয়। তাহলেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য ২০২৬ বিশ্বকাপে নামতে প্রস্তুত।
সময় কারও জন্য থেমে থাকে না। লিওনেল মেসির ক্ষেত্রেও না। আসছে জুনে ৩৮ পেরিয়ে ৩৯-এর পথে হাঁটবেন ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা নাম। আর সেই বয়সে বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় নিজেকে প্রমাণ করা মোটেও সহজ কাজ নয়।তাইতো ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলছেন না মেসি।‘আমি প্রতিটি দিন ধরে এগোচ্ছি,’—বললেন মেসি সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে।
তিনি জানালেন, আগামী এক বছর তাঁর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই সময়েই তিনি বুঝতে পারবেন—বিশ্বকাপ খেলার মতো পর্যাপ্ত ফিটনেস আছে কি না এবং সবচেয়ে বড় কথা তিনি দলের জন্য বোঝা হবেন কি না।
‘অবশ্যই আমি পরবর্তী বিশ্বকাপ নিয়ে ভাবছি। দলের সঙ্গে সেই মঞ্চে থাকতে চাই। তবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ধীরে ও নিজের প্রতি সৎ থেকে। আমি নিশ্চিত হতে চাই যে বিশ্বকাপে খেললে আমি দলকে কিছু দিতে পারব, কেবল নাম নয়।’
কানাডা, মেক্সিকো আর যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে হতে চলা ২০২৬ বিশ্বকাপে মেসিকে দেখা যাবে কি না—তা সময়ই বলে দেবে। তবে এতটুকু নিশ্চিত যে মেসি সহজে কোনো কিছু ‘মেসির মতো’ না করে ছাড়বেন না।
বিশ্বকাপ নিয়ে লিওনেল মেসির গল্পটা যেন সিনেমার চেয়েও রোমাঞ্চকর। একদিকে ২০১৪ সালের ব্রাজিলের কান্না, অন্যদিকে ২০২২ কাতারের আনন্দাশ্রু। মেসি তুলনা করেছেন নিজের ২০১৪ সালের দুঃখের সঙ্গে কিলিয়ান এমবাপ্পের ২০২২ সালের যন্ত্রণাকে।‘এমবাপ্পে ফাইনালে চার গোল করেছে (টাইব্রেকারসহ), তবুও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ব্যাপারটা শুনতে পাগলামি মনে হলেও এটাই বাস্তব। ভাগ্য তার সঙ্গে ছিল না। যদিও সে ২০১৮ বিশ্বকাপ জিতেছে, এটা তার জন্য বড় সান্ত্বনা।
আর আমার ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটেছিল ২০১৪ সালে। মানসিকভাবে সেটা ছিল দুঃসহ এক অভিজ্ঞতা। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার ঝুলিতে দুইটা বিশ্বকাপ ট্রফি থাকার কথা ছিল,’—বলেছেন মেসি।
তবে সব আফসোসই মুছে গেছে ২০২২ সালে, কাতারের মাটিতে। ফুটবলের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে আজ নিজের জীবন ও ক্যারিয়ার নিয়ে সম্পূর্ণ তৃপ্ত মেসি।
‘আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। বিশ্বকাপটাই ছিল একমাত্র অপূর্ণতা, সেটাও পূর্ণ হয়েছে। ফুটবলে আমি যা কিছু পাওয়ার ছিল, সব পেয়েছি। এটা বলে দিতে পারা—এটা এক বিশাল অর্জন। সবসময় ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি। তিনি আমাকে সব দিয়েছেন,’—বলেছেন ৩৭ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি